১ ডলার সমান কত রুপি ?

১ ডলার সমান কত রুপি ?

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন। আমরা আজকের আর্টিকেলে কথা বলবো আমেরিকান ডলার এবং আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার মুদ্রা (রুপি)‌ নিয়ে। ইন্ডিয়া উপমহাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা সবাই প্রায় কম বেশি ইন্ডিয়ান রুপির ইতিহাস সম্পর্কে জানি! এ কারণে এটা নিয়ে বেশি কিছু লিখবো না। আমরা আগে ডলারের ইতিহাস, ডলারের উত্থান এবং কিভাবে ডলার পুরো পৃথিবী জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে সে সম্পর্কে জানবো। কারণ আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এসব তথ্য আমাদের সবারই জানা উচিত। এরপরে আমরা মুদ্রা হিসেবে ডলার এবং রুপির বিনিময় হারের পার্থক্য কেমন সেটা জানার চেষ্টা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

শুরুতেই আমরা ডলার নিয়ে কথা বলবো। আমরা জানি বিশ্বের প্রতিটি দেশে তাদের তাদের নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। মুদ্রা হিসেবে আমাদের দেশে যেভাবে টাকা প্রচলিত রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রা হিসেবে ডলার প্রচলিত রয়েছে। আপনি যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে চান তবে সেটা টাকা দিয়ে করতে পারবেন না। এটা করার জন্য প্রয়োজন হয় ডলারের। পৃথিবীর সিংহভাগ দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে ডলারের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ পণ্য আমদানি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বিল মেটানো হয় ডলারের মাধ্যমে। এ কারণেই পুরো বিশ্বজুড়ে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ডলারকে।

বর্তমান তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় 85 ভাগ লেনদেন হয় ডলারে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এর তথ্য অনুসারে পুরো বিশ্বের সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের ৬২ শতাংশ অংশ জুড়ে যেটি রয়েছে সেটি হলো ডলার। এর বাইরে ২০ শতাংশ রিজার্ভ দখল করে রেখেছে ইউরো।
বলে রাখা ভালো যে একসময় বিশ্বব্যাপী ডলারের এরকম একচেটিয়া আধিপত্য ছিল না। তখন আধিপত্য ছিলো ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় আড়াই বছর পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে, যার ফলে এ যুদ্ধের রেশ তেমন কোন খারাপ প্রভাব ফেলেনি রাষ্ট্রের উপরে।

উপরন্তু, মিত্র দেশগুলোর কাছে সোনার বিনিমযয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে যুদ্ধ সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করে। যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে ব্যাপক পরিমাণে সোনা মজুদ হয়ে যায়। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক পরে অংশগ্রহণ করে। এবং এ যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি করে। যার ফলে দেশটির কোষাকার আরো বেশি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এদিকে যুদ্ধের কারণে সে সময় পুরো ইউরোপ জুড়ে চলছে কেবল ধ্বংসলীলা। মানুষের হাতেও কোন কাজ নেই।

এরপর ১৯৪৪ সালে প্রায় ৪৪ টি দেশকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ব্রেটন উডসে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হয় এবং সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের উপর ভিত্তি করে এসব দেশের মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এদিকে সোনার উপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আর পুরো বিশ্বে মজুদকৃত সোনার প্রায় ৭০ ভাগ তখন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তগত ছিল। সবকিছু মিলিয়ে আলোচনায় থাকা সেই সব দেশসমূহ তাদের দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলার সংরক্ষণের ব্যাপারে একমত হয়। এবং সেই থেকে পুরো বিশ্বজুড়ে ডলারের আধিপত্য শুরু।

যাইহোক, বিশেষজ্ঞদের মতে ডলারের আধিপত্য খুব সহজে ভাঙ্গা প্রায় অসম্ভব। কোন কারনে যদি যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বাড়িয়ে দেয় তাহলে বিশ্বের প্রায় সিংহভাগ দেশ অনেক বড়সড় একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এদিকে পুরো পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ডলার ভিত্তিক হওয়ার কারণে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পুরো বিশ্বের অর্থনীতির উপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

ডলার সম্পর্কে তো অনেক জানা হলো। এবার তাহলে আমরা ডলার এবং ইন্ডিয়ান রুপি বিনিময় হারের পার্থক্যটা দেখে নেই।

বৈশ্বিক বাজার অনুযায়ী বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে একজন ভারতীয় নাগরিককে গুনতে হবে প্রায় ৮২.৩৭ ইন্ডিয়ান রুপি। অর্থাৎ ১ ডলার সমান ৮২.৩৭ রুপি। এ হিসাবে ৫০ ডলার সমান ৪২১৮.৫ রুপি; ১০০ ডলার সমান ৮২৩৭ রুপি; এবং ১০০০ ডলার সমান প্রায় ৮২,৩৭০ রুপি।

এখানে বলে রাখা ভালো যে এই তথ্যটি সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ পৃথিবীর সকল কারেন্সির মান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *