১ টাকা সমান কত রুপি ?

১ টাকা সমান কত রুপি ?

আক্ষরিক অর্থে আমাদের জীবনের সাথে যে জিনিসটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটির নাম হলো টাকা। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা টাকা ব্যবহার করি। টাকা ছাড়া আমাদের সবার জীবন অচল এবং এ কারণেই বলা হয়ে থাকে মানি ইজ দ্যা সেকেন্ড গড।

যাইহোক আজকে আমরা কথা বলবো সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রচলিত দুটি দেশের মুদ্রা সম্পর্কে। মুদ্রা দুটি হলো টাকা এবং রুপি। প্রথমে আমরা দুটি দেশের মুদ্রা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য জেনে নেবো তারপর আমরা এই দুটি মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হারের পার্থক্য কেমন সেটা পর্যালোচনা করে দেখব।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

টাকা বা নোট হল মূলত অর্থের একটি প্রত্যক্ষ রূপ। আবার টাকা হল মূলত একটি মুদ্রার নাম। আর বিনিময়ের মাধ্যম বলতে আসলে এই মুদ্রাকেই বোঝানো হয়। এদিকে আমরা সবাই জানি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুদ্রার নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন একজনের নাম রহিম আরেকজনের নাম করিম হলেও তারা দুজনেই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষ। তেমনি ভাবে ডলার, পাউন্ড, ইউরো, রিঙ্গিত, রুপি, টাকা, ইয়েন, যাই বলি না কেন এদের সবার পরিচয় হলো এরা মুদ্রা।

অতীতে এক সময় টাকা বলতে কোন কিছু ছিল না। কিন্তু তখনও মানুষের অনেক জিনিসপত্রের দরকার হতো। তাহলে তখন তাদের প্রয়োজন মিটতো কিভাবে? আসলে তখন থেকেই মানুষজন লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং লেনদেন প্রক্রিয়া চালু করার জন্য বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার শুরু করে। প্রথম দিকে গাছের পাতা কিংবা তামার তৈরি ধাতব খন্ড দিয়ে লেনদেন শুরু করে। অতঃপর বিশ্বসভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে কারখানায় তৈরি কাগজের খন্ড।

এবার ‘টাকা’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে কথা বলা যাক। ভাষাবিদগণের ধারণা যে সংস্কৃত ‘টঙ্ক’ থেকে ‘টাকা’ শব্দের উৎপত্তি। এখানে টঙ্ক শব্দের অর্থ হচ্ছে রৌপ্য মুদ্রা। অতীতে ধাতব মুদ্রা বুঝানোর ক্ষেত্রে টাকা শব্দের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। বঙ্গ রাজ্যে টাকা বলতে যেকোনো ধরনের ধাতব মুদ্রা কে বোঝানো হতো। এমনকি সালতানাতের লোকেরাও সোনা-রুপার ধাতব মুদ্রাকে অন্য কোন নামে না ডেকে টাকা বলেই থাকতো।

এদিকে স্বাধীনতার পূর্বে সমগ্র পাকিস্তানে রুপির প্রচলন ছিল। তবে পূর্ব পাকিস্তানের লোকজন কাগজ-কলমে এটিকে টাকা বলেই ডাকতো। মজার বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা আলাদা করে ঐ পাকিস্তানী রুপির দুপাশে “বাংলা দেশ” এবং “Bangla Sesh” লেখা এক ধরনের রাবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতো। অতঃপর পাকিস্তান সরকার ১৯৭১ সালের ৮ জুন এই নোটগুলোকে অবৈধ এবং মূল্যহীন বলে ঘোষণা করে। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে রুপির পরিবর্তে টাকার প্রচলন হয়।

এবার ভারতের মুদ্রা অর্থাৎ রুপি নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথমত রুপি বলতে শুধুমাত্র ভারতীয় মুদ্রাকেই বোঝায় না। বিশ্বে আরো অনেক দেশ আছে এবং সে সব দেশের মুদ্রার নামও রুপি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে মালদ্বীপ, নেপাল, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, সিসেলস, তিব্বত,‌ পুরনো আফগানিস্তান, বার্মা, জার্মান পূর্ব আফ্রিকা, ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা ইত্যাদি।
মূলত সংস্কৃত শব্দ ‘রুপিয়া’ থেকে রুপি শব্দের উৎপত্তি যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দাঁড়ায় ‘পেটা রুপা’ বা ‘রৌপ্য মুদ্রা’। শের শাহ সুরি (১৫৪০-১৫৪৫) তার শাসনামলে উত্তর ভারতের প্রথম রুপিয়া মুদ্রার প্রচলন শুরু করেন। তারপর থেকে কালের বিবর্তনে এবং সভ্যতার উন্নতির সাথে নানাবিধ ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় রুপি বর্তমান রুপ লাভ করে।

যাইহোক, আমরা এতক্ষণে টাকা এবং রুপির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলেছি। এবার জানবো এই মুদ্রা দুটির বিনিময়ে হারের পার্থক্য সম্পর্কে।
এক্ষেত্রে আমাদের সবার মনে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে সেটি হলো ১ টাকা সমান কত রুপি? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

বিশ্ববাজারের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী ১ টাকার বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্য এখন ০.৭৭ টাকা।
সুতরাং এই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ১০ টাকা সমান ভারতীয় মুদ্রার মূল্য ৭.৭ রুপি; ১০০ টাকা সমান ৭৭ রুপি; ১০০০ টাকা সমান ৭৭০ রুপি; ১০,০০০ ঢাকা সমান ৭৭০০ রুপি।

তবে এটি স্থায়ী বিনিময় হার নয়। কারণ বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিনিয়ত সকল মুদ্রার বিনিময়ের হারে তারতম্য হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *