১ সাতোশি কত টাকা ?

১ সাতোশি কত টাকা ?

সাতোশি শব্দটির সাথে আমরা বেশিরভাগ মানুষজন হয়তো খুব কম পরিচিত। কিন্তু যদি বলি বিটকয়েন, তাহলে দেখা যাবে যে অধিকাংশ মানুষই এই শব্দটির সাথে পরিচিত। তাহলে সাতোশি জিনিসটা কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে ছোট এককের নাম হলো সাতোশি। এটি আসলে একটি বিটকয়েনের ১০০ মিলিয়ন ভাগের ১ ভাগকে প্রতিনিধিত্ব করে।‌

অর্থাৎ একটি বিটকয়েনের ১০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ সাতোশি। এটাকে তাই 0.00000001 BTC আকারে লেখা যায় বা প্রকাশ করা হয়। এর মানে দাঁড়ালো ১০০ মিলিয়ন সাতোশির সমষ্টি সমান ১ বিটকয়েন বা একটি বিটকয়েনের ভিতরে 100 মিলিয়ন সাতোশি থাকে। এর সংক্ষিপ্ত রূপের নাম হল ‘স্যাটস’। প্রতিনিয়ত বিটকয়েনের মূল্য কেবল বেড়েই চলেছে, কিন্তু একটি সাতোশি বিটকয়েনের অতি ক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশ হওয়ার কারণে এর মূল্য অনেক কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে ১ টি সাতোশীর মূল্য আমরা যদি 0.01 ডলার লিখতে চাই তাহলে ১টি বিটকয়েনের মূল্য ১ মিলিয়ন হতে হবে।

বিটকয়েন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিটি বেনামী থাকার জন্য ছদ্মনাম হিসেবে “সাতোশি নাকামোটো” নামটি ব্যবহার করেন। এরপর 2010 সালের 15 নভেম্বর BitcoinTalk ফোরামের একজন মেম্বার (রিবাক) বিটকয়েনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটগুলোর জন্য “সাতোশি” নামটি ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। পরে অন্যান্য সদস্যরা তার এই আইডিয়াটাকে গ্রহণ করেন এবং সম্মতি দেয়।

এখন কথা হল সাতোশি কিভাবে কাজ করে? যেহেতু সাতোশি বিটকয়েনেরই একটা ক্ষুদ্র ইউনিট, সেহেতু এটির কাজ বিটকয়েনের মতই। ব্যবহারকারীরা মূলত পরিমাণ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বিটকয়েন এবং সাতোশি দুটোই ব্যবহার করে থাকে। মোটকথা হলো রাউন্ড ফিগার বর্ণনা করার জন্য বিটকয়েন এবং ভগ্নাংশ আকারে বর্ণনা করার জন্য সাতোশি ব্যবহার করা হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায় বলে পণ্য এবং সেবা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহার করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। ডলারের খুচরা হিসেবে যেমন সেন্ট ব্যবহার করা সুবিধাজনক, তেমনিভাবে বিটকয়েনের খুচরা হিসাবে সাতোশি ব্যবহার করার সুবিধাজনক।

যাইহোক‌, যে কোন জিনিস যেমন ইউরো এবং ডলার দিয়ে কেনা যায়, ঠিক একইভাবে বিটকয়েন দিয়েও কেনা যায়। কিন্তু বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ব্যবস্থার সাথে সে দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও বিটকয়েন এর ক্ষেত্রে এরকম কোন কিছুর সংশ্লিষ্টতা থাকে না।

বিটকয়েন লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকে না। ব্যবহারকারীরা অনলাইনের মাধ্যমে পিয়ার টুপি আর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। এই মুদ্রার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এটিকে ধরা যায় না ছুঁয়ে দেখা যায় না। সম্পূর্ণ ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে এটি ভার্চুয়ালি আদান-প্রদান হয়। আর লেনদেন সুরক্ষিত রাখার জন্য এখানে ব্যবহার করা হয় ক্রিপটোগ্রাফি নামক একটি পদ্ধতি। আবার এখানে লেনদেন করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত পরিচয়ও প্রকাশ করতে হয় না।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে বিশ্ববাজারে এখন বিটকয়েন কোন অবস্থানে চলে এসেছে। বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থায় বিটকয়েনের প্রচলন এখন একটি বিপ্লবের নাম। এখনই বিটকয়েন কে গ্লোবাল মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাহলে ভবিষ্যতে এটির অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ‌বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে বিটকয়েনের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খোলা থাকবে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সুতরাং আন্দাজ করা যাচ্ছে যে পুরো বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থাকে বিটকয়েন এক সময় গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করবে এবং সেই সাথে এটি মূল চালকের আসন গ্রহণ করবে। দুই তিন বছর আগে এলন মাস্কের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান টেসলা কোম্পানি ক্রিপ্টো কারেন্সির জগতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ইনভেস্ট করার ঘোষণা প্রকাশ করে। এরপর থেকে বিটকয়েনের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় একটি বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ২৯৪৬৩৫৭.০৪ টাকা।
আবার এর ১০ কোটি ভাগের এক ভাগ সমান হলো 0.0294635704 টাকা। তার মানে দাঁড়ালো এক সাতোশি সমান 0.0294635704 টাকা। মনে রাখতে হবে যে বিটকয়েনের মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। তাই এর মূল্য সর্বদা পরিবর্তনশীল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *