১ মিলিয়ন ইউরো কত টাকা ?

১ মিলিয়ন ইউরো কত টাকা ?

হ্যাঁ, উপরের টাইটেল দেখেই বুঝতে পারছেন যে আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু কি হতে চলেছে। আজকে আমরা কথা বলবো বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় মুদ্রা অর্থাৎ ইউরো সম্পর্কে। এরপর আমরা বাংলাদেশী টাকা এবং ইউরো মুদ্রার বিনিময় হারের পার্থক্য কি রকম সে সম্পর্কে জানবো।

মূলত ইউরো কারেন্সি হল ইউরোপ মহাদেশের দেশসমূহের মুদ্রা। ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন গঠিত হয়। এটি গঠিত হওয়ার পর থেকেই নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মুদ্রা প্রচলন করার জন্য তারা নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে অবশেষে ১৯৯৯ সালে ইউরো মুদ্রার আবির্ভাব ঘটে।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ইউরো মুদ্রা গ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ২৫ টি। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য ১৯ টি দেশ এবং এর বাইরের সদস্য ৬ টি দেশ। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়া সত্বেও ইউরো মুদ্রা গ্রহণ করেনি এরকম দেশের সংখ্যা ৯ টি।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য ভুক্ত এবং ইউরো মুদ্রা গ্রহণকারী দেশগুলো হলো আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, ইতালি, গ্রীস, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ড, মালটা, সাইপ্রাস, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়া।

অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত হওয়া সত্বেও যে সকল দেশ এখনো ইউরো মুদ্রা গ্রহণ করেনি তারা হলো হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, সুইডেন।

আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য ভুক্ত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও যে সকল দেশ ইউরো মুদ্রাকে গ্রহণ করেছে তারা হলো মন্টেনিগ্রো, অ্যান্ডোরা, মোনাকো, ভ্যাটিক্যান সিটি, সান মেরিনো এবং কসোভো।

২০২২ সালের শুরুর দিকে একক ইউরোপীয় কারেন্সি হিসেবে ইউরো মুদ্রা দু’দশক পূরণ করলো।
বৈশ্বিক মন্দা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টানপোড়েনের মধ্যেও বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে ইউরো তার অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে রেখেছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী মুদ্রা। পুরো বিশ্বজুড়ে ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ কোটির উপরে। রোমানিয়া বুলগেরিয়ার মত দেশগুলোও হয়তো খুব শীঘ্রই এ তালিকায় যুক্ত হবে। তখন হয়তো ইউরো মুদ্রার প্রচার এবং প্রসার আরো বহু গুণে বেড়ে যাবে।

মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য আরো অনেক বেশি সহজ করার লক্ষ্যে ইউএস ডলারের মত পুরো ইউরোপ জুড়ে একটি শক্তিশালী মুদ্রা চালু করার লক্ষ্যে ১৯৭০ সালেই ইউরো মুদ্রার ধারণা সর্বপ্রথম তৈরি হয়। বলে রাখা ভালো যে ইউরো মুদ্রার জনক হলো রবার্ট মুন্ডেল। এখন বলতে গেলে ইউরো এবং ইউরোপ একে অন্যের জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ইউরো মুদ্রা চালু করার সময় নানা ধরনের গুঞ্জন, নেতিবাচক মন্তব্য, ভয় ও শঙ্কা জেগে উঠেছিল। কিন্তু ইউরো সে সকল নেতিবাচক প্রশ্নের সম্মুখ জবাব দিয়ে এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। অবশ্য এক দশক আগে গ্রিসে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে ইউরো মুদ্রার অবস্থান বেশ সংকটের মুখে পড়ে। সে সময়ে কোনমতে পতনের হাত থেকে ইউরো বেঁচে ফিরে আসে। এবং এই সংকটের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই করোনা মহামারীতে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো ছিল ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী দেশগুলো।

যাইহোক, এবার আমরা বাংলাদেশী টাকা এবং ইউরো মুদ্রার বিনিময় হারের মধ্যে পার্থক্য দেখবো।
আমরা জানি ১ মিলিয়ন সমান ১০ লক্ষ। এর অর্থ হলো বাংলাদেশী টাকায় ১ মিলিয়ন টাকা মানে হলো ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাজার অনুযায়ী ১ ইউরো সমান বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১১৬.১৩ টাকা।

তাহলে এক মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ১০ লক্ষ ইউরো সমান বাংলাদেশি টাকায় কত টাকা হবে?
১০০০০০০ কে ১১৬.১৩ দ্বারা গুণ করলে পাই ১১৬১৩০০০০ টাকা।
অর্থাৎ, বর্তমান বাজার অনুযায়ী এক মিলিয়ন ইউরো সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ কোটি ৬১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এখানে মনে রাখতে হবে যে উল্লেখিত এই মুদ্রা বিনিময় হার সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। প্রতিদিন বিশ্ববাজারের অবস্থা অনুসারে মুদ্রা বিনিময়ের হার পরিবর্তিত হয়।

যাইহোক, সবকিছু পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বর্তমানে এক ডলারের বিপরীতে একজন বাংলাদেশী নাগরিককে যত টাকা গুনতে হয়, ১ ইউরোর ক্ষেত্রে তার চেয়ে কিছু বেশি টাকা গুনতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *