১০ মিলিয়ন সমান কত টাকা ?

১০ মিলিয়ন সমান কত টাকা ?

বাংলা ভাষায় বড় বড় টাকার হিসাব করার ক্ষেত্রে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখনই আমরা বড় বড় হিসাব করার সময় আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করি, তখনই আমাদের অনেকের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? তাহলে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

আমরা প্রায়ই মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়নে হিসাব করার ক্ষেত্রে ভুল করে ফেলি, কারন আমরা এগুলো সম্পর্কে ভালোমতো অবগত নই। বাংলায় হিসাব করার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত একক, দশক, শতক, হাজার, অযুত, লক্ষ, নিযুত কোটি দিয়ে হিসাব করি। মূলত এটি হল ভারতীয় সংখ্যা গণনা পদ্ধতি। বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন, প্রচার এবং প্রসারের কারণে আমাদের চোখের সামনে বারবার মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন শব্দগুলো ঘুরেফিরে চলে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সম্পদের হিসাব থেকে শুরু করে ইউটিউব, ফেইসবুক প্রভৃতি প্লাটফর্মগুলোতে ভিউ গণনার ক্ষেত্রেও মিলিয়ন, বিলিয়ন শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়।

এখন কথা হলো বাংলায় হিসাব করার সময় হাজার থেকে উপরের দিকে যেতে হলে আমরা লাখে চলে যাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে হাজারের উপরে হিসাব করার সময় লাখ ব্যবহার না করে মিলিয়ন ব্যবহার করা হয়। এখানে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার আছে। যেমন ১,৪৯,০০০ সংখ্যাটিকে বাংলায় বলার ক্ষেত্রে আমরা বলি ১ লক্ষ ৪৯ হাজার। কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে এটি ১৪৯,০০০। অর্থাৎ একশত ঊনপঞ্চাশ হাজার। এখানে কমার (,) দিকে ভালো করে নজর দিতে হবে।

চলুন আরেকটি উদাহরণ দেখে নেই। ১,৭২,৬৫,৩০৭ একটি সংখ্যা। এটিকে যদি আমরা কথায় বলি তাহলে সেটি শুনতে এরকম হবে যে ১ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩০৭ টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে এই সংখ্যাটি হবে ১৭,২৬৫,৩০৭ এরকম। অর্থাৎ ১৭ মিলিয়ন ২৬৫ হাজার ৩০৭ টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে এখানে কমার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলা হিসাবের ক্ষেত্রে হাজারের পরে বাম দিকে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি দুই ঘর পর পর কমা দিতে হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ডান দিক থেকে হিসেব করার সময় প্রতি ৩ ঘর পরপর কমা দিতে হয়।

তাহলে এখন আমরা খুব সহজেই বলতে পারি যে ১ মিলিয়ন টাকার অর্থ হলো বাংলায় সেটি ১০ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে ১ এর পরে ৬টি শূন্য দিতে হয় (১,০০০,০০০)। তাহলে হিসাবটা এরকম দাঁড়ায় যে,
১ মিলিয়ন সমান ১০ লাখ, ১০ মিলিয়ন সমান ১ কোটি, ১০০ মিলিয়ন সমান ১০ কোটি, ১০০০ মিলিয়ন সমান ১০০ কোটি।

মিলিয়নের হিসাব তো হলো, এবার তাহলে সহজ করে বিলিয়নের হিসাব টা দেখে নেই। ১ বিলিয়ন সমান ১০০০ মিলিয়ন। অর্থাৎ একের পরে নয়টি শূন্য দিতে হবে। ১,০০০,০০০,০০০।
তাহলে ১ বিলিয়ন সমান ১০০০ মিলিয়ন বা ১০০ কোটি।
১০ বিলিয়ন সমান ১০,০০০ মিলিয়ন বা ১০০০ কোটি। ১০০ বিলিয়ন সমান ১০০,০০০ মিলিয়ন বা ১০,০০০ কোটি।

আশা করছি এই হিসাব গুলো মনে রাখতে পারলে বড় বড় হিসেবগুলো মিলিয়ন কিংবা বিলিয়নে করতে গেলেও কোন সমস্যা হবে না। উপরের উদাহরণগুলো দিয়ে আপনারা নিজেরা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা তৈরি করার মাধ্যমে প্র্যাকটিস করতে পারেন। তাহলে মনে রাখা আরো সহজ হবে। এরপর দেখবেন পত্রিকা অনলাইন কিংবা সামাজিক মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে বর্ণনা করা সংখ্যাগুলো বুঝতে আর কোন সমস্যা হচ্ছে না।

আর হ্যাঁ আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি হলো, প্র্যাকটিস করার সময় নিজেই নিজেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং সংখ্যা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে লিখতে বলবেন। যেমন ১৩৫ মিলিয়ন সমান কত টাকা, বা ৫৫৭ মিলিয়ন সমান কত টাকা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

পরিশেষে একটা জিনিস না বললেই নয়। এই যুগে প্রতিটা মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যার হিসাব জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। কারণ বর্তমান বিশ্ব হলো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব। এখানে বৈশ্বিক লেনদেনের পরিমাণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আর বৈশ্বিক লেনদেন করতে হলে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যার হিসাব সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা থাকা সবার জন্য অত্যাবশ্যক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *