১ মার্কিন ডলার বাংলাদেশের কত টাকা ?

১ মার্কিন ডলার বাংলাদেশের কত টাকা ?

আজকের এই উন্নতবিশ্বে সবকিছুই আমাদের হাতের নাগালে। আপনি মুঠোফোনটা বের করে কোন একটা পেইজে বা অ্যাপে ঢুকে কোন একটা পছন্দের বা প্রয়োজনীয় জিনিস দেশের অন্য একটা প্রান্ত থেকে কিনে আপনার দেশে নিয়ে আসতে পারেন। তবে সেই জিনিসগুলো কিন্তু আপনি টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না। কিনতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ডলার। তাহলে দেশীয় মূল্যে আপনি কত টাকার জিনিস কিনছেন তা জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে ডলারের মুদ্রামান। তাহলে বুঝতেই পারছেন আজকে আমরা কথা বলব মার্কিন ডলারের মুদ্রামান এবং বাংলাদেশী টাকার সাথে তার বিনিময় হার নিয়ে। আর সেই সাথে আমেরিকান ডলারের আন্তর্জাতিক মুদ্রা হয়ে ওঠার ব্যাপারেও আমরা কথা বলব এই আর্টিকেলটিতে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

একটা দেশের স্থানীয় মুদ্রা বলতে আমরা কী বুঝি? স্থানীয় মুদ্রা বলতে আমরা বুঝি, যে মুদ্রার ব্যবহার একটি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যেকটা জায়গায় প্রচলিত থাকে। বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা যেমন টাকা। বাংলাদেশের সব এলাকায়, সব স্থানে প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য মুদ্রা হল টাকা। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে টাকা ব্যবহার করি।

কিন্তু আমরা যখন অন্য কোন দেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করি, অন্য কোন দেশে ঘুরতে যাই সে ক্ষেত্রে তখন আমাদের দেশের স্থানীয় মুদ্রা টাকা আমরা ব্যবহার করতে পারি না। অন্য কোনো দেশে ঘুরতে গেলে, বাণিজ্য করতে গেলে বা চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনে যতে হলে পাসপোর্টে তখন ইনডোর্স করতে হয় মার্কিন ডলার। তারপর সেই দেশের মুদ্রায় রূপান্তর করে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকি। আবার অন্য কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে কেউ আসলেও তাদেরকে একই নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

আবার আমরা যখন আমাদের দেশের তৈরি পোশাক ইউরোপে রপ্তানি করে ইউরো আয় করি সেটা দিয়েও কিন্তু দেশের বাজারে আমরা কোন কিছু কেনাকাটা করা বা শ্রমিকদের মজুরি দেয়া এই সমস্ত কাজগুলো করতে পারি না। আবার একজন ইউরোপীয় ক্রেতার পক্ষেও কিন্তু বাংলাদেশি টাকা আয় করা সম্ভব নয়। এই কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেনে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মুদ্রার ভিন্নতা।

এই সমস্যা দূর করতে অতীতে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহৃত হত সোনা অথবা রুপা, যেটাকে বলা হত কমোডিটি মানে অর্থাৎ এই মুদ্রাগুলোর অন্তর্নিহিত মূল্য থাকে। কোন দেশ যখন অন্য দেশ থেকে কোনকিছু আমদানি করত, তখন সেই দেশের কোষাগারে সোনার পরিমাণ কমে যেত আর রপ্তানি করলে কোষাগারে সোনার পরিমাণ যেত বেড়ে। অর্থাৎ সোনাই ছিল আন্তর্জাতিকভাবে সাধারণ এবং একক মুদ্রা। আর বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার মান নির্ধারিত হত সোনার বিপরীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ব্যবস্থাটা এমনই ছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋনী হয়ে পড়ে ইউরোপীয় দেশগুলো। তাই সেই দেশগুলোর পক্ষে নিজেদের মুদ্রার বিপরীতে সোনা মজুদ করে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এর পরে ব্রেটন উডস চুক্তিতে নতুন জারিকৃত নিয়মে বলা হয় মার্কিন ডলারের বিপরীতেই শুধুমাত্র সোনা মজুদ থাকবে। আর অন্যান্য দেশের সকল মুদ্রা সামঞ্জস্য বজায় রাখবে মার্কিন ডলারের সাথে। দুটি ভিন্ন দেশ বাণিজ্য করত ডলারে। কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত সোনা নেই। ডলার ভেঙেই সোনা পাওয়া যেত। ফলে মার্কিন ডলারই হয়ে উঠল নতুন সোনা। পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাতিল ঘোষণা করে দেন ডলারের প্রতিস্থাপক হিসেবে সোনার মজুত রাখার ব্যবস্থা। এভাবেই আন্তর্জাতিক সাধারণ মুদ্রায় পরিণত হল মার্কিন ডলার, হয়ে উঠল অভিন্ন এবং একক বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি।

এবার জেনে নেই চলুন বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার সমান বাংলাদেশের কত টাকা। ১ মার্কিন ডলার সমান বাংলাদেশের ১০৭.০২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ১০৭.০২ টাকা দিয়ে আমরা ১ মার্কিন ডলার কিনতে পারব। অনেকদিন ধরেই ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ১ মার্কিন ডলারে গড়ে পাওয়া যেত ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে ডলারের মুদ্রামান পরিবর্তনশীল। একটি নির্দিষ্ট সময় বা দিন পরপর ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়। ১ জানুয়ারি, ২০২৩ এ ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ছিল ১০৩.১৬ টাকা। এই কয়েকমাসে ডলারের দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আবারও কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যাবে ডলারের মুদ্রামান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *