১ লিরা কত টাকা ?

১ লিরা কত টাকা ?

বিশ্বের আলোচিত দেশ গুলোর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম। আর তুরস্কের অফিসিয়াল মুদ্রার নাম হল লিরা। বিশ্ববাজারে লিরার বর্তমান অবস্থান বা মূল্যমানের সার্বিক অবস্থা কি রকম, তা নিয়ে আমরা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকা এবং টার্কিস লিরার বিনিময় হার কেমন সেটাও আমরা লক্ষ্য করবো। আর এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো্ জানার জন্য আর্টিকেলটি ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

টার্কিশ লিরার ইতিহাস অনেক লম্বা। ১৮৪৪ সালে অটমান সাম্রাজ্যের সময় সর্বপ্রথম মুদ্রা হিসেবে লিরার আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে এই মুদ্রাকে দফায় দফায় দর পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অনেক ধকল সহ্য করতে হয়েছে।

যাইহোক ১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে তৎকালীন তুরস্ক সরকার পুরাতন ওটোমান লিরার পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুন লিরা বাজারে ছাড়ে।
এরপর ১৯৩১ সাল পর্যন্ত এই মুদ্রা ব্রিটিশ পাউন্ডের সাথে একীভূত থাকে এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ইউএস ডলারের সাথে একীভূত থাকে। কিন্তু ১৯৪৬ সালের পরে লিরাকে আবারো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যার ফলে অন্যান্য কারেন্সির সাথে টেক্কা দিতে গিয়ে এটির দরমূল্য পুনরায় ওঠানামা করতে শুরু করে।

যাইহোক ১৯৫০ থেকে ৬০ সালের মধ্যে তুরস্কের অর্থনীতি খুব দ্রুত গতিতে ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালে তুরস্ক ভয়ংকর মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে যায়। যার ফলে বিশ্ববাজারে আবারো লিরার উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটে।

এরপর ২০০৫ সালে ব্যাপক সংস্করণ এবং পরিমার্জন এর মধ্য দিয়ে তুরস্ক সরকার আবারো নতুন করে লিরা মুদ্রা চালু করে। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল ছিলো।

কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে হঠাৎ করে তুরস্কে ভয়ঙ্কর রকম অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই অস্থিতিশীলতা চলে আসছে। আর এর পেছনের নেপথ্যে রয়েছে আমেরিকার সাথে তুরস্কের রাজনৈতিক কলহ।
এ কারণে বিগত কয়েক বছরে তাদের মুদ্রা লিরার দাম কমতে কমতে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণ নির্ভর রাষ্ট্র হওয়ার কারণে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ ঋণের আসল এবং সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। মুদ্রাস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশের উপরে চলে গেছে।

যেখানে ২০০৬ সালে এক লিরা সমান বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় 52 টাকা ছিল, সেখানে বর্তমানে এসে লিরার দর পতন হয়েছে প্রায় দশ গুণ। বিগত কয়েক বছরে লিরার কি পরিমান দরপতন হয়েছে বাংলাদেশি টাকার সাথে তুলনা করে সেটা একটু দেখে নেই।

২০০৮ সালে ছিলো ১ লিরা সমান ৫২ টাকা
২০০৯ = ৪২ টাকা
২০১০ =৪৫
২০১১= ৪৫
২০১২= ৪৫
২০১৩= ৩৫
২০১৪= ৩৫
২০১৫= ৩২
২০১৬= ২৬
২০১৭= ২১
২০১৮= ২১
২০১৯= ১৫
২০২০= ১৪
২০২১= ১১
অতঃপর ২০২৩ সালে এসে বিশ্ববাজার অনুযায়ী বর্তমানে এক লিরা সমান বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫.৪৯ টাকায় নেমেছে।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। তুরস্কে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বসবাস করে। তুরস্কে এমন ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের উপার্জন হঠাৎ করে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে তুরস্কে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের অসংখ্য স্ট্যাটাস সবার চোখে পড়েছে। বর্তমানে তারা তীব্র হতাশা এবং দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পক্ষে আর তুরস্কে অবস্থান করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। এমতাবস্থায় তারা যদি দেশে ফিরে আসে তাহলে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিটেন্স আসা বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরেও একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যদিও তুরস্ক সরকার তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সেটা ফলপ্রসু হতে কতদিন লাগবে তা বলা মুশকিল।

আমরা তুরস্কের সকল ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করব যাতে করে তারা খুব শীঘ্রই আবার সুখ ও সমৃদ্ধির সাথে জীবন যাপন করতে পারে এবং তুরস্ক যেন আবারও তাদের সেই হারানো অর্থনীতির সোনালী দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *