উত্তর-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া। আজকে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা উয়ন বা ওন সম্পর্কে জানবো। সেই সাথে আমরা এটাও জেনে নেবো যে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার সাথে বাংলাদেশী মুদ্রার মানের পার্থক্যটা আসলে কি রকম। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি মুদ্রার নাম হলো ওন। এটিকে KRW দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা কর্তৃক মনোনীত এই মুদ্রার কোড নম্বর হলো ৪১০। ১৯৬২ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়াতে ওন জাতীয় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এবার তাহলে একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। স্বাধীনতার পূর্বে দক্ষিণ কোরিয়া যখন জাপানের অধীনে ছিল তখন সেখানে অফিসিয়াল কারেন্সি হিসাবে জাপানের মুদ্রা ইয়েন এর প্রচলন ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দুই কোরিয়া বিভক্ত হয়ে যায় এবং দুই দেশের জন্য দুটি ভিন্ন মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। অতঃপর ইউ এস ডলারের সাথে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হার বজায় রেখে দক্ষিণ কোরিয়াতে ওন মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৫ সালে। কিন্তু ১৯৫৫ সালে সংঘটিত কোরিয়া যুদ্ধের সময় এই মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে ওঠানামা করা শুরু করে। এর পেছনের কারণ ছিল মুদ্রাস্ফীতি এবং যুদ্ধের কাজে অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য প্রচুর টাকা ছাপানো।
যাইহোক, এরপর ১৯৫৩ সালে সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দি ব্যাংক অফ কোরিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় যেটির মূল দায়িত্ব ছিল এই মুদ্রাকে স্থিতিস্থাপক করা এবং এর মান বাড়ানো। এর মাত্র কয়েক দশকের মাঝেই দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির চাকা প্রবল ভাবে বেগবান হয় যেটির প্রতিফলন এই মুদ্রার মানের উপরে সরাসরি পড়তে দেখা যায়। কিন্তু ১৯৯০ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আবারো এই মুদ্রার মান অনেক কমে যায়, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিকে আবারো কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। উদাহরণস্বরূপ উক্ত সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার পতন হয়ে এক ইউ এস ডলার সমান প্রায় এক হাজার ওনে নেমে আসে। এরপর থেকেই মুদ্রার মান বাড়ানোর জন্য এবং অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এবং দি ব্যাংক অফ কোরিয়া একইসাথে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুদের হার বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে সরকারি ব্যয় কমানো, এবং দক্ষ ভাবে মুদ্রানীতি বজায় রাখা। এ সময় দক্ষিণ কোরিয়া আইএমএফ এর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং আইএমএফ এর বেল আউট প্যাকেজ অনুসারে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কার মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন এবং সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন।
এরপর ২০০৯ সালে দি ব্যাংক অফ কোরিয়া সম্পূর্ণ নতুন সিরিজের কতিপয় ব্যাংক নোট বাজারে ছাড়ে যেখানে সুরক্ষা থেকে শুরু করে হলোগ্রাম, কালার শিফটিং সহ বিভিন্ন জায়গায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। বর্তমান বাজারে ওন এর ১০০০ ,৫০০০ এবং ৫০,০০০ এর নোট প্রচলিত রয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েন হিসেবে প্রচলন রয়েছে ১০, ৫০ , ৫০০, ১০০ এবং ৫০০ ওন এর।
বর্তমানে উচ্চমানের এবং নির্ভরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে ওন কারেন্সি পুরো বিশ্বব্যাপী পরিচিত যেটি কিনা দক্ষিণ কোরিয়ার সবল অর্থনীতি এবং বিশ্বের বুকে দক্ষিণ কোরিয়ার ভালো অবস্থানকে নির্দেশ করে।
এবার তাহলে বাংলাদেশী মুদ্রার সাথে ওন এর বিনিময় হারের পার্থক্যটা দেখে নেই আমরা।
বর্তমান বিশ্ববাজার অনুযায়ী ১ ওন সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ০.০৮২ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী ১০ ওন সমান বাংলাদেশি টাকায় ০.৮২ টাকা; ১০০ ওন সমান বাংলাদেশি টাকায় ৮.২ টাকা এবং ১০০০ ওন সমান প্রায় ৮২ টাকা হয়। মনে রাখতে হবে যে উল্লেখিত এই বিনিময় হার সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ বিশ্ব বাজারের বিভিন্ন নিয়ামকের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে প্রতিনিয়ত প্রতিটি দেশের কারেন্সির দরদাম উঠানামা করে।
যাইহোক, এখানে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে যে দুই দেশের মুদ্রা বিনিময় হারে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান।এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিকভাবে খুবই সচ্ছল এবং উন্নত একটি দেশ।