১ রুবল সমান কত টাকা ?

১ রুবল সমান কত টাকা ?

রাশিয়ার মুদ্রার নাম কি জানেন? রুবল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নাটকীয়তা চলছে রুবল এবং ডলার নিয়ে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে যুদ্ধ শুরুর আগে যে অবস্থায় রুবল ছিল, এখন তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে রুবল। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আক্রমণ করে তার পরপরই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষতিসাধন করতেই পশ্চিমা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

রুবলের মুদ্রামান নাটকীয় ভাবে কমতে থাকে। আমরা তো ভেবে নিয়েছিলাম যে রুবলের আর মূল্য থাকবে না। মস্কো শেয়ারবাজার দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রেখে সংকট সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করলো রুবল। রুশ রুবলের ঘুরে দাঁড়ানোর মূল চালিকাশক্তি ছিল গ্যাস ও তেল অর্থাৎ রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি। রুবলকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পুতিন নিয়ে নিলেন একটি মাথা ঘুরিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত। যেহেতু রাশিয়ার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তেল ও গ্যাস রপ্তানি করা। তাই ইউরোপের সাথে চুক্তিও ছিল সেরকম। অর্থাৎ ইউরোপ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল এবং গ্যাস আমদানি করে মূল্য পরিশোধ করত ইউরো দিয়ে। কিন্তু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে পুতিন বলেছেন, তেল ও গ্যাস ক্রয় করে মূল্য পরিশোধ ইউরোতে নয় বরং রুবলে করতে হবে। তাই ইউরোকে এখন রূপান্তর করতে হচ্ছে রুবলে আর রুবল হয়ে উঠছে শক্তিশালী।

এদিকে ভারত এবং চীনের কাছে জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রির ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ছে রাশিয়াতে। রাশিয়ার রপ্তানি পণ্যের ৬০% হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি এবং রপ্তানি আয়ের ৪০% আসে সেখান থেকে। ইউরোপের দেশগুলোও এই আমদানির উপর নির্ভরশীল। তেল-গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়ার কারণে আমেরিকা এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার ফলে তেল ও গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ অনেকটা কমে গেলেও রাশিয়ার তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আবার এদিকে নিষেধাজ্ঞার জন্যই রাশিয়ার নাগরিক অন্য কোন দেশে যেতে পারছে না এবং অন্য দেশ থেকে ডলার বা ইউরোর বিনিময়ে কোনকিছু আমদানিও করতে পারছে না। তাই রাশিয়ার ডলার এবং ইউরো লাগছেনা। অথচ তেল-গ্যাস কেনার জন্য রাশিয়ান রুবলের চাহিদা বেড়ে গেছে।

রুবলের মান স্থিতিশীল রাখতে রাশিয়া আরও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে আগে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী রাশিয়ায় সরকারি বন্ড ক্রয় করেছিল বা রাশিয়া কর্পোরেট শেয়ার নিয়েছিল তারা সেগুলো বিক্রি করে দিতে চাইছে এবং তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পুতিন। এভাবে রাশিয়ার বন্ড মার্কেট এবং স্টক মার্কেটের পতন ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে এবং রুবলও দেশের বাইরে যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাশিয়া দ্বিগুণ হারে বাড়িয়েছে সুদ। এদিকে যারা রুবল জমিয়ে রাখছে অর্থাৎ রুবলের মাধ্যমে ইউরো বা ডলার কিনছে না, তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে প্রণোদনা।

বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে রাশিয়ার অনেক কোম্পানি ব্যবসা করে আয় করছে ইউরো, ডলার এবং ইয়েন। কিন্তু এখন যে আয় হবে তার ৮০% রুবল এ রূপান্তর করতে হবে এবং এভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রুবলের চাহিদা। আবার রাশিয়ার রুবল যাতে বাইরে না যায় সে ব্যবস্থাও নিয়েছে পুতিন। দেশের বাইরে যদি অর্থ পাঠাতে হয় তাহলে রুবলকে রূপান্তর করতে হত ডলারে বা ইউরোতে। কিন্তু তা আর করতে দেয়া হচ্ছে না। এসব কারনেই ইউরো আর ডলারের চাহিদা কমে গিয়েছে আর রাশিয়ার ভেতরে রয়ে গেছে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা, যেটা রুবল এর দাম কমে যাওয়া ঠেকাতে সহযোগিতা করছে।

এ তো গেল রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের রেষারেষির বিষয়। বাংলাদেশ ও রাশিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরেও বাংলাদেশ মনে করেনা ভবিষ্যতে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ রাশিয়ার মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে তার ওপর। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করে যে বিশেষ ভুমিকা রেখেছে সেই বিবেচনায় আমরা বলতেই পারি যে রাশিয়া আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু। আবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশ দুটি থেকে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল সেটাও দূর হতে আরম্ভ করেছে।

যেহেতু আমাদের দেশের সাথে রাশিয়ার একটি অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই রুবল এবং বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন জেনে নেই এক রুবল সমান বাংলাদেশের কত টাকা। বর্তমানে ১ রুবল সমান বাংলাদেশের ১.৩৩ টাকা। আর বাংলাদেশের ১ টাকা সমান ০.৭৫ রাশিয়ান রুবল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *